মাইক্রোপ্রসেসর এর ভূমিকা (Introduction to Microprocessor)
মাইক্রোপ্রসেসর এমন একটি চিপ যা কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রসেসিং ইউনিট (CPU) হিসেবে কাজ করে এবং কম্পিউটারের সকল গাণিতিক ও লজিক্যাল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি এক ধরনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) যা ইনস্ট্রাকশন অনুসারে কাজ করে, ডাটা প্রসেসিং করে এবং নির্দেশনা কার্যকর করে। মাইক্রোপ্রসেসর বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, গাড়ি, এবং গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স অন্তর্ভুক্ত।
মাইক্রোপ্রসেসরের উৎপত্তি এবং বিকাশ
প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি হয়েছিল ১৯৭১ সালে ইন্টেল দ্বারা, যার নাম ছিল Intel 4004। এটি একটি ৪-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ছিল এবং সাধারণ গণনা ও নির্দেশনা কার্যকর করতে সক্ষম ছিল। এরপরের মাইক্রোপ্রসেসরগুলোতে ৮-বিট, ১৬-বিট, ৩২-বিট, এবং বর্তমানে ৬৪-বিট মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়। এগুলো ধীরে ধীরে আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাইক্রোপ্রসেসরের প্রয়োজনীয়তা
মাইক্রোপ্রসেসর হল যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের কার্যক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এর প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্ট:
- গণনা ও ডাটা প্রক্রিয়াকরণ: মাইক্রোপ্রসেসর দ্রুতগতিতে ডাটা প্রসেসিং এবং নির্দেশনা কার্যকর করে, যা কম্পিউটারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং ছোট আকারের: মাইক্রোপ্রসেসর কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং ছোট আকৃতির হওয়ায় এটি বিভিন্ন ছোট ডিভাইসে সংযোজিত করা সহজ।
- দ্রুতগতি: আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর গিগাহার্জ (GHz) স্কেলে কাজ করে, যার ফলে এটি দ্রুত নির্দেশনা সম্পাদন করতে সক্ষম।
- বিশ্বস্ততা: এটি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী, যা ডিভাইসের কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করে।
মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যপদ্ধতি
মাইক্রোপ্রসেসরের কাজ তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত করা যায়: ফেচ (Fetch), ডিকোড (Decode), এবং এক্সিকিউট (Execute)।
- ফেচ (Fetch): প্রথম ধাপে মাইক্রোপ্রসেসর মেমোরি থেকে ইনস্ট্রাকশন সংগ্রহ করে, যা ফেচ প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত।
- ডিকোড (Decode): দ্বিতীয় ধাপে ইনস্ট্রাকশনকে ডিকোড করা হয়, অর্থাৎ কম্পিউটার বোঝে যে নির্দেশনাটি কী ধরনের কাজ সম্পাদন করবে।
- এক্সিকিউট (Execute): শেষ ধাপে নির্দেশনাটি কার্যকর করা হয়, যার মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর তার গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ সম্পন্ন করে।
মাইক্রোপ্রসেসরের প্রকারভেদ
মাইক্রোপ্রসেসর বিভিন্ন বিট সাইজ অনুযায়ী ভাগ করা যায়:
- ৪-বিট মাইক্রোপ্রসেসর: ছোট গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ৮-বিট মাইক্রোপ্রসেসর: সাধারণত পুরনো কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়।
- ১৬-বিট মাইক্রোপ্রসেসর: বড় ডাটা হ্যান্ডল করতে সক্ষম এবং অনেক বেশি কার্যক্ষম।
- ৩২-বিট ও ৬৪-বিট মাইক্রোপ্রসেসর: আধুনিক কম্পিউটার ও ডিভাইসে ব্যবহৃত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর।
মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহারের ক্ষেত্র
মাইক্রোপ্রসেসর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:
- কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ: কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রসেসর হিসেবে কাজ করে।
- স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট: দ্রুতগতির ডাটা প্রসেসিং এবং অ্যাপ্লিকেশন চালাতে ব্যবহৃত।
- গাড়ি এবং যানবাহন: ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
- গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি: রেফ্রিজারেটর, ওভেন, ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহৃত হয়।
- স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি: বিভিন্ন ধরনের শিল্প যন্ত্রপাতি এবং রোবোটিক সিস্টেমে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোপ্রসেসরের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে মাইক্রোপ্রসেসরের আকার ছোট হচ্ছে এবং ক্ষমতা বাড়ছে, যার ফলে এটি আরও শক্তিশালী এবং কম বিদ্যুৎ খরচে কাজ করতে পারছে। ন্যানোপ্রযুক্তির সাথে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে মাইক্রোপ্রসেসর আরও শক্তিশালী হবে এবং বড় স্কেলে কাজ করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, এবং IoT প্রযুক্তির সঙ্গে একত্রিত হয়ে এটি আধুনিক প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করবে।
সারসংক্ষেপ
মাইক্রোপ্রসেসর আধুনিক প্রযুক্তি ও কম্পিউটিং সিস্টেমের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। মাইক্রোপ্রসেসর ছাড়া আধুনিক কম্পিউটিং এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে, মাইক্রোপ্রসেসরের ক্ষমতা এবং ব্যবহার বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং কার্যকর করে তুলবে।
মাইক্রোপ্রসেসর কী?
মাইক্রোপ্রসেসর একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রসেসিং ইউনিট (CPU) হিসেবে কাজ করে। এটি ডাটা প্রসেসিং, গাণিতিক গণনা এবং বিভিন্ন নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, মাইক্রোপ্রসেসর হল একক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) চিপ যা লক্ষ লক্ষ ট্রানজিস্টর নিয়ে গঠিত এবং যা একাধিক গাণিতিক এবং লজিক্যাল কার্যক্রম দ্রুত সম্পাদন করতে সক্ষম। মাইক্রোপ্রসেসর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গাড়ি, এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি যন্ত্র।
মাইক্রোপ্রসেসরের ইতিহাস
মাইক্রোপ্রসেসরের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৭১ সালে, যখন ইন্টেল কোম্পানি প্রথম Intel 4004 নামক প্রসেসরটি তৈরি করে। এই প্রথম মাইক্রোপ্রসেসরটি ছিল একটি ৪-বিটের প্রসেসর, যা শুধুমাত্র গাণিতিক অপারেশন এবং ছোট নির্দেশনা কার্যকর করতে পারত।
মাইক্রোপ্রসেসরের বিকাশের ধাপ
- Intel 4004 (১৯৭১):
- এটি ছিল বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক মাইক্রোপ্রসেসর।
- মাত্র ২,৩০০ ট্রানজিস্টর নিয়ে গঠিত এবং প্রতি সেকেন্ডে ৯২,০০০ ইনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়া করতে পারত।
- মূলত ক্যালকুলেটর এবং ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হতো।
- Intel 8008 (১৯৭২):
- এটি ছিল ৮-বিট মাইক্রোপ্রসেসর এবং পূর্ববর্তী মডেলের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল।
- প্রতি সেকেন্ডে ৩,৩০,০০০ ইনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়া করতে সক্ষম ছিল।
- এই প্রসেসরের মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার আরও প্রসারিত হয়।
- Intel 8080 (১৯৭৪):
- এটি ছিল প্রথম সত্যিকারের ৮-বিট মাইক্রোপ্রসেসর যা বৃহৎ স্কেলে কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়।
- এর সাফল্যের কারণে মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহারের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
- Intel 8086 (১৯৭৮):
- এটি প্রথম ১৬-বিট মাইক্রোপ্রসেসর যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- এই মডেলটি আরও দ্রুত এবং শক্তিশালী ছিল এবং এই প্রসেসরের আর্কিটেকচার পরবর্তী মাইক্রোপ্রসেসরের ভিত্তি স্থাপন করে।
- Intel 80386 (১৯৮৫):
- প্রথম ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর যা আরও শক্তিশালী এবং বৃহৎ মেমোরি অ্যাড্রেসিং ক্ষমতা নিয়ে আসে।
- এটি মাল্টিটাস্কিংয়ের সুবিধা নিয়ে আসে এবং বহু কাজ একসাথে সম্পাদনের পথ উন্মুক্ত করে।
- Intel Pentium Series (১৯৯৩):
- এই সিরিজে প্রথমবারের মত উন্নত মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চ গতির ডাটা প্রসেসিং সক্ষমতা প্রদান করে।
- Pentium সিরিজের প্রসেসর বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার এবং ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়, যা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায়।
মাইক্রোপ্রসেসরের সাম্প্রতিক উন্নয়ন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে ৬৪-বিট প্রসেসর ব্যবহৃত হচ্ছে, যা গিগাহার্জ স্তরে কাজ করে এবং তীব্র গতিতে নির্দেশনা কার্যকর করতে সক্ষম। আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসরগুলোর মধ্যে মাল্টি-কোর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে একাধিক কোর একসঙ্গে কাজ করে প্রসেসিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া, ন্যানোস্কেল প্রযুক্তির কারণে মাইক্রোপ্রসেসরের আকার ছোট হয়েছে এবং কার্যক্ষমতা বেড়েছে।
সারসংক্ষেপ
মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রের বিকাশের এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হলেও সময়ের সাথে সাথে মাইক্রোপ্রসেসরের ক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাইক্রোপ্রসেসর এর কাজ
মাইক্রোপ্রসেসর বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন করে যা কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করে। মাইক্রোপ্রসেসরের প্রধান কাজগুলো নিম্নরূপ:
- ডাটা প্রসেসিং:
- মাইক্রোপ্রসেসর ইনপুট ডাটা গ্রহণ করে তা প্রক্রিয়া করে এবং আউটপুট প্রদান করে। এটি গাণিতিক এবং লজিক্যাল অপারেশন সম্পাদন করে যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, তুলনা, ইত্যাদি।
- ইনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়াকরণ:
- মাইক্রোপ্রসেসর প্রোগ্রাম থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করে এবং প্রতিটি নির্দেশনা সঠিকভাবে কার্যকর করে। এর মধ্যে ফেচ (Fetch), ডিকোড (Decode), এবং এক্সিকিউট (Execute) ধাপগুলো অন্তর্ভুক্ত।
- মেমোরি নিয়ন্ত্রণ:
- মাইক্রোপ্রসেসর মেমোরির সাথে সংযোগ স্থাপন করে ডাটা পড়া এবং লেখার কাজ করে। এটি মেমোরি অ্যাড্রেসিং করে ডাটাকে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে তা ফেরত আনতে সক্ষম।
- ইনপুট/আউটপুট নিয়ন্ত্রণ:
- মাইক্রোপ্রসেসর ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইসের সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কীবোর্ড থেকে ডাটা গ্রহণ করে এবং মনিটরে আউটপুট প্রদান করে।
মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার
মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং সিস্টেমে করা হয়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে এর কিছু প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
- কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ:
- মাইক্রোপ্রসেসর কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রসেসর হিসেবে কাজ করে, যা অপারেটিং সিস্টেম এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার পরিচালনা করে।
- মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেট:
- মাইক্রোপ্রসেসর মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয় অ্যাপ্লিকেশন চালানো এবং দ্রুত ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য। এটি স্মার্টফোনকে একটি শক্তিশালী এবং কার্যক্ষম ডিভাইস হিসেবে গড়ে তোলে।
- গাড়ি এবং যানবাহন:
- আধুনিক গাড়িগুলিতে মাইক্রোপ্রসেসর ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ, ব্রেকিং সিস্টেম, এবং সুরক্ষা ফিচার পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি গাড়ির কার্যক্ষমতা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে।
- গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি:
- রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওভেন ইত্যাদি গৃহস্থালি যন্ত্রে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়। এটি স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি:
- শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এবং রোবোটিক সিস্টেমে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক।
- গেমিং কনসোল:
- গেমিং কনসোলে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয় দ্রুতগামী ডাটা প্রসেসিং এবং উন্নত গ্রাফিক্স সাপোর্ট প্রদান করতে। এটি গেমিং অভিজ্ঞতা উন্নত করে।
- স্বাস্থ্যসেবা যন্ত্রপাতি:
- ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্যসেবা যন্ত্রপাতি, যেমন ইসিজি মেশিন, এমআরআই, এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টুলে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়, যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সারসংক্ষেপ
মাইক্রোপ্রসেসর আধুনিক ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এটি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ডাটা প্রক্রিয়াকরণ এবং নির্দেশনা কার্যকর করে বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাইক্রোকন্ট্রোলার বনাম মাইক্রোপ্রসেসর
মাইক্রোকন্ট্রোলার এবং মাইক্রোপ্রসেসর, দুটি কম্পিউটার ইলেকট্রনিক ডিভাইস হলেও তাদের কাজ, গঠন এবং ব্যবহারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে তাদের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হয়েছে:
মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor)
মাইক্রোপ্রসেসর হল একটি কেন্দ্রীয় প্রসেসিং ইউনিট (CPU) যা কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসে গাণিতিক এবং লজিক্যাল কাজ সম্পাদন করে। এটি মূলত প্রক্রিয়াকরণ এবং কম্পিউটার সিস্টেমের নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) হিসেবে থাকে এবং সাধারণত অন্যান্য উপাদানের সাথে সংযোগ স্থাপন করে কাজ করে।
মাইক্রোপ্রসেসরের বৈশিষ্ট্য:
- প্রধান কাজ: গাণিতিক এবং লজিক্যাল অপারেশন সম্পাদন করা।
- প্রসেসিং ক্ষমতা: উচ্চ গতির প্রসেসিং ক্ষমতা, প্রধানত বড় কম্পিউটিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
- মেমোরি: মাইক্রোপ্রসেসর নিজে কোনো ইনবিল্ট মেমোরি রাখে না, এটি এক্সটার্নাল মেমোরি (RAM, ROM) ব্যবহার করে।
- ব্যবহার: প্রধানত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, গেমিং কনসোল এবং অন্যান্য বৃহৎ সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
- আকার: সাধারণত বড় এবং শক্তিশালী, যা শক্তিশালী প্রসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোকন্ট্রোলার (Microcontroller)
মাইক্রোকন্ট্রোলার হল একটি ছোট সিঙ্গেল চিপ কম্পিউটার যা একটি পুরো সিস্টেমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ইনপুট, আউটপুট, মেমোরি এবং প্রসেসর একসাথে একটি চিপে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি সাধারণত সস্তা এবং কম্প্যাক্ট আকারের হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন, যেমন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, রোবটিকস, স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোকন্ট্রোলারের বৈশিষ্ট্য:
- প্রধান কাজ: ইনপুট থেকে ডাটা গ্রহণ এবং আউটপুট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা।
- প্রসেসিং ক্ষমতা: কম গতির প্রসেসিং ক্ষমতা, তবে নির্দিষ্ট কাজে দ্রুত এবং দক্ষ।
- মেমোরি: মাইক্রোকন্ট্রোলার নিজের অভ্যন্তরীণ মেমোরি (RAM, ROM) রাখে।
- ব্যবহার: গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, অটোমেশন সিস্টেম, রোবটিকস, স্নায়ু সিস্টেম এবং পোর্টেবল ডিভাইসগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
- আকার: ছোট আকারে এবং সস্তা, যা কম খরচে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম তৈরিতে সহায়ক।
প্রধান পার্থক্য
| বৈশিষ্ট্য | মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) | মাইক্রোকন্ট্রোলার (Microcontroller) |
|---|---|---|
| প্রসেসিং ক্ষমতা | উচ্চ গতির প্রসেসিং ক্ষমতা | কম গতির প্রসেসিং ক্ষমতা |
| মেমোরি | এক্সটার্নাল মেমোরি ব্যবহার করা হয় | অভ্যন্তরীণ মেমোরি (RAM, ROM) থাকে |
| ব্যবহার | কম্পিউটার, সার্ভার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল | গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, রোবটিকস, অটোমেশন সিস্টেম |
| বিকাশের উদ্দেশ্য | বড় এবং শক্তিশালী সিস্টেমের জন্য | নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য ছোট সিস্টেম তৈরি |
| আকার | বড় আকারের, শক্তিশালী সিস্টেমের জন্য | ছোট আকারের, বিশেষ কাজে ব্যবহৃত |
| মূল উপাদান | কেবল CPU, এক্সটার্নাল মেমোরি ব্যবহৃত হয় | CPU, RAM, ROM, I/O একত্রে একটি চিপে থাকে |
সারসংক্ষেপ
মাইক্রোপ্রসেসর হল একটি শক্তিশালী প্রসেসিং ইউনিট যা বড় সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, যেখানে উচ্চ গতির ডাটা প্রসেসিং প্রয়োজন। অন্যদিকে, মাইক্রোকন্ট্রোলার একটি সস্তা এবং কম্প্যাক্ট সিস্টেম, যা বিশেষ কাজ সম্পাদন করতে ছোট সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোকন্ট্রোলার সাধারণত মাইক্রোপ্রসেসরের তুলনায় কম গতির হলেও, নির্দিষ্ট কাজের জন্য এটি অনেক বেশি কার্যকর এবং উপযুক্ত।
Read more